মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৯ পূর্বাহ্ন
নজরুল ইসলাম মজুমদার, নাসা গ্রুপ ও বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিত হলেও, তার আরেকটি বিশেষ সম্পর্কও আলোচনায় এসেছে—সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি বোন (বেয়াইন) বলে সম্বোধন করতেন। পত্রিকাগুলোতে প্রায়ই দেখা যেত হাসিনার পাশে মজুমদারের হাস্যোজ্জ্বল ছবি।
এই ঘনিষ্ঠতার সুবাদে তিনি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির চেয়ারম্যান পদে আসীন হন, যেখানে প্রায় ১৫ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন। একবার এই পদে পা রাখার পর, আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রভাবশালী মহলের আশীর্বাদে, তিনি দেশের ব্যাংক খাতের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব বা ‘মাফিয়া’ হিসেবে গড়ে ওঠেন। আর্থিক খাত থেকে পাওয়া টাকায় দেশ-বিদেশে বিশাল সম্পদ গড়ে তোলেন, যার মধ্যে একাধিক দেশে তার বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে।
তবে শেষ পর্যন্ত তার অবৈধ কার্যকলাপ ধরা পড়ে। মঙ্গলবার মধ্যরাতে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) নজরুল ইসলাম মজুমদারকে গ্রেফতারের খবর জানায়।
সূত্রমতে, ২০১৭ সালের পর থেকে মজুমদার নিজেকে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের একক ক্ষমতাধর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার ছেলে ওয়ালিদ ইবনে ইসলামের সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের ভায়রার মেয়ের বিয়ের পর থেকেই তিনি শেখ হাসিনাকে বোন বলে ডাকা শুরু করেন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর, শেখ হাসিনার সাথে এই সম্পর্কের কারণে মজুমদার আরও ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন। নাসা গ্রুপের অংশীদার হলেও, তিনি তার প্রভাবের কারণে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেন। এক পর্যায়ে তিনি বেআইনিভাবে ২০ শতাংশ শেয়ারহোল্ডার ও স্পন্সর পরিচালক আলতাফ হোসেনকে কোম্পানি থেকে বের করে দেন।
আলতাফ আইনি লড়াই শুরু করেন এবং মজুমদারের অর্থ পাচারের প্রমাণসহ তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ সরকারে উত্থাপন করেন। জানা গেছে, লন্ডন, হংকং, দুবাই, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে মজুমদারের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের দোহায়ও তার সম্পদ থাকার কথা জানা গেছে।
সিআইডি জানায়, ব্যক্তিগত ক্ষমতা ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নাসা গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৪টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে শত শত কোটি টাকা দুবাই, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে পৃথক অনুসন্ধান করছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।