বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ০২:২২ পূর্বাহ্ন
২০১৫ সালে প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করে ইউরোপের মাল্টা দেশের পাসপোর্ট নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন টিউলিপ সিদ্দিকের চাচী শাহীন সিদ্দিক এবং তার চাচাত বোন বুশরা সিদ্দিক। তবে তাদের আবেদন বাতিল হয়। শাহীন সিদ্দিকের স্বামী, তারিক জামিল সিদ্দিক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন।
২০১৫ সালের আগে, ২০১৩ সালে, মাল্টার পাসপোর্টের জন্য প্রথম আবেদন করেছিলেন তারিক জামিল সিদ্দিক। তবে অর্থপাচার, দুর্নীতি, প্রতারণা এবং ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের কারণে তার আবেদনও বাতিল হয়। এসব তথ্য সম্প্রতি ফাঁস হওয়া নথি থেকে জানা গেছে, যা শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।
২০১৫ সালে মাল্টার পাসপোর্ট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ছিল হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনার্স, যা বিনিয়োগের মাধ্যমে পাসপোর্ট প্রদান করত। ওই সময় বাংলাদেশে প্রচারিত সংবাদে ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠানটি সিদ্ধান্ত নেয় যে, শাহীন সিদ্দিক ‘প্রচ্ছায়া’ নামক একটি কোম্পানির মাধ্যমে ঢাকার মূল্যবান সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করেছেন। এ কারণে তাকে পাসপোর্ট দেওয়া হয়নি। শাহীন সিদ্দিক তার পাসপোর্টের আবেদনে ‘প্রচ্ছায়া’ কোম্পানির চেয়ারম্যান হওয়ার দাবি করেছিলেন।
শাহীন সিদ্দিক ও তার মেয়ে বুশরা ২০১৫ সালে মাল্টার পাসপোর্টের জন্য যে আবেদন করেছিলেন, তার জন্য তাদের যথাক্রমে ৬ লাখ ৫০ হাজার এবং ২৫ হাজার পাউন্ড লাগত, এবং হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনার্সের ফি ছিল আরও ৭০ হাজার পাউন্ড।
শাহীন সিদ্দিক তার আবেদনপত্রে কুয়ালালামপুরের একটি ব্যাংকে ২৭ লাখ ৬০ হাজার ৪০৯ ডলার দেখিয়েছিলেন, যেটি ১১টি কিস্তিতে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছিল। তবে এসব অর্থের উৎস স্পষ্ট হয়নি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে যে আইন রয়েছে, তাতে একজন ব্যক্তি বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি বিদেশে পাঠাতে পারেন না।
এদিকে, তারিক জামিল সিদ্দিক ও শাহীন সিদ্দিকের মেয়ে তখন লন্ডনে স্টুডেন্ট ভিসায় পড়াশোনা করছিলেন এবং তার ঠিকানা ছিল গ্র্যান্ড গোথিক ভবনের তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে, যা টিউলিপ সিদ্দিকের লন্ডনের কিংস ক্রস ফ্ল্যাটের কাছেই অবস্থিত। ২০০৪ সালে ব্রিটিশ বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ওই ফ্ল্যাটটি টিউলিপকে উপহার দিয়েছিলেন, তবে কেন তিনি এত দামী ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
২০১৫ সালে প্রথম আবেদন নাকচ হওয়ার পর, শাহীন সিদ্দিক দ্বিতীয়বার আবেদন করেন এবং দাবি করেন যে, তিনি চট্টগ্রামের ‘দ্য আর্ট প্রেস’ নামক একটি কোম্পানির পরিচালক, যা তার বাবা ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে এই কোম্পানি নিয়ে সন্তুষ্ট না হওয়ায় তাকে এবং তার মেয়েকে পাসপোর্ট দেওয়া হয়নি।
বুশরা সিদ্দিক লন্ডনে পড়াশোনা শেষ করার পর জেপি মর্গান ব্যাংকে কিছুদিন চাকরি করেন, পরে চাকরি ছেড়ে দেন। ২০১৮ সালে উত্তর লন্ডনে ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন ইউরো দামে একটি পাঁচ বেডরুমের ফ্ল্যাট কিনেন, যা তার বাবা-মা তাকে উপহার দিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অক্টোবর মাসে, শেখ হাসিনার পতনের পর, বাংলাদেশ ব্যাংক তারিক জামিল সিদ্দিক এবং শাহীন সিদ্দিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার নির্দেশ দেয়।