বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন
২০০৭ সালের ২৮ মে আটক হন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, এবং সেই থেকে তিনি কারাবন্দি ছিলেন। দীর্ঘ ১৭ বছর সাত মাস পর আজ (মঙ্গলবার) সবশেষ দণ্ডের মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। রায়ের পর আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর স্ত্রী তাহমিনা জামান শ্রাবণী। অপরদিকে, সমর্থকেরা উল্লাসে মিছিল শুরু করেন। তবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি বাবরের স্ত্রী ও ছেলে। একমাত্র আইনজীবী শিশির মনিরই বক্তব্য রেখেছেন।
শিশির মনির বলেন, “লুৎফুজ্জামান বাবরকে ৭৮ দিন রিমান্ডে রাখা হয়েছিল। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষ তাকে বারবার চাপ দেয়, যাতে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জড়িত করে জবানবন্দি দেন। তাদের কথা অনুযায়ী, যদি তিনি জবানবন্দি দেন, তাহলে তাকে আসামি না করে সাক্ষী করা হবে। কিন্তু ৭৮ দিন রিমান্ডে থাকার পরও তিনি এই ধরনের জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। বাবর নিজে জানিয়েছেন, এই মামলায় তাকে আসামি করার পেছনে এটি মূল কারণ।”
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের বেঞ্চ বাবরকে খালাসের রায় দেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসিফ ইমরান জিসান। আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও আইনজীবী শিশির মনির।
শিশির মনির আরও বলেন, “কোর্ট বলেছেন, আজকেই একটি অ্যাডভান্স অর্ডার সই করবেন। আমি আশা করছি, আজকেই এই আদেশ পৌঁছাবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিনি জেল থেকে মুক্তি পাবেন। তিনি বর্তমানে কেরানীগঞ্জ কারাগারে আছেন। কারাগারে আদেশ পৌঁছানোর পর, তার স্বজনরা তাকে আইনানুযায়ী মুক্ত করে সম্মানের সঙ্গে তার বাসায় পৌঁছে দেবেন।”
এছাড়া, এই মামলায় ১৪ জনের সাজা হয়েছিল, যার মধ্যে পাঁচজন খালাস পেয়েছেন এবং পাঁচজনের সাজা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুজনিত কারণে চারজনের আপিল বাতিল হয়ে গেছে।
এর আগে, ১৮ ডিসেম্বর ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পেয়েছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর। তিনি দুর্নীতি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের (দুই মামলা) মতো বড় মামলায় দণ্ডিত হয়েছিলেন। তবে ২০২২ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর এসব মামলার আপিল শুনানি শেষে তিনি খালাস পান।
লুৎফুজ্জামান বাবর ১৯৫৮ সালের ১০ অক্টোবর নেত্রকোণায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯১ সালে প্রথমবার নেত্রকোণা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০০১ সালে তিনি আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান।
২০০৭ সালের ২৮ মে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি আটক হন এবং সেই থেকে কারাবন্দি ছিলেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন মামলায় তার দণ্ড হয়, যার মধ্যে দুটি মামলায় মৃত্যুদণ্ড হয় এবং একটিতে যাবজ্জীবন দণ্ড হয়।