সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ০২:১৩ পূর্বাহ্ন
বাংলাদেশের ক্রিকেট তারকা তামিম ইকবাল অবশেষে জাতীয় দলের হয়ে আর খেলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শুক্রবার রাতে ফেসবুকের মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দেন, যা দেশের ক্রিকেটমহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
তামিমের অবসরের সিদ্ধান্তের পর, জাতীয় দলের দুই সিনিয়র ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ চুপ থাকতে পারেননি। তারা নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আবেগঘন পোস্ট করে তামিমকে উদ্দেশ্য করে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।
মুশফিক তার পোস্টে লিখেছেন, “তামিম, তোমার অবসরের পর আমি জানাতে চাই, তুমি যা অর্জন করেছো, তা আমাদের গর্বের বিষয়। বন্ধু, তুমি বাংলাদেশ ক্রিকেটের একজন অসাধারণ দূত এবং বিশ্বমানের ব্যাটার।”
২০১৮ সালে এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আঙুলের চোট নিয়েও মাঠে নেমে কোটি ভক্তের হৃদয় জয় করেছিলেন তামিম। মুশফিক সেই স্মরণীয় মুহূর্ত উল্লেখ করে বলেন, “আমি সবসময় দুবাইয়ে আমাদের জুটির কথা মনে রাখবো, বিশেষ করে যখন তুমি একটি ভাঙা আঙুল নিয়ে ব্যাট করছিলে। এটি তোমার দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং খেলার প্রতি তোমার আবেগকে প্রকাশ করে।”
মাহমুদউল্লাহ তার পোস্টে লিখেছেন, “তামিম, তোমার দীর্ঘ এবং সফল আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অসাধারণ অর্জনের জন্য অনেক অভিনন্দন। তুমি বাংলাদেশ দলের জন্য অনেক কিছু অর্জন করেছো এবং দেশের ক্রিকেটে গভীর অবদান রেখেছো। আমার মনে হয়, এটাই ছিল শেষবারের মতো আমরা একসঙ্গে বাংলাদেশ দলের হয়ে ব্যাটিং করেছি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “তোমার সঙ্গে খেলা ছিল আনন্দের। মাঠে এবং মাঠের বাইরে তোমার সঙ্গে অনেক স্মৃতি শেয়ার করেছি। আমি তোমার সুখী অবসর কামনা করি এবং তোমার ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানাই। তুমি আমাদের হৃদয়ে চিরকাল থাকবে।”
তামিমের অবসরের সিদ্ধান্তের পর, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্কোয়াড ঘোষণা করার আগে তাকে পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ দিয়েছিল নির্বাচকরা। তবে, তামিম এই সিদ্ধান্তে পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন এবং জানিয়ে দেন যে, তিনি আর জাতীয় দলে ফিরবেন না।
তামিম তার পোস্টে বলেন, “এ বিষয়ে আমি অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় একটি আসর সামনে আসছে, তবে আমি চাই না আমার অবসরের কারণে কোনো ধরনের আলোচনা শুরু হোক এবং দলের মনোযোগে কোনো ব্যাঘাত ঘটুক। আমি এটা আগেও চাইনি, তাই অনেক আগেই নিজেকে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম। যদিও অনেকেই বলেছিল, আমি নাকি সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রেখেছি, তবে আমি বিসিবির চুক্তিতে নেই এবং এক বছরের বেশি সময় আগে নিজ থেকেই সরে দাঁড়িয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “অবসর নেওয়া বা খেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত একজন ক্রিকেটারের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। আমি নিজেকে সময় দিয়েছি এবং এখন মনে হয়েছে, এই সময়েই আমার অবসর নেওয়া উচিত।”
২০২৩ সালে আফগানিস্তান সিরিজ চলাকালীন আচমকা সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর তামিম তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন, কারণ তখন তিনি দলের অধিনায়ক ছিলেন। পরদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তামিম তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছিলেন। এরপর ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে দুই ম্যাচ খেলেন তামিম। তবে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির পর তিনি জাতীয় দলে ফেরার পথে নানা সংকটে পড়েন, যার ফলে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে তামিম ছাড়া খেলতে যায়।
তামিমের এই অবসর বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে এক যুগের সমাপ্তি ঘটালো, তবে তার অবদান বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।