মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩১ পূর্বাহ্ন
ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৮২ শতাংশ শেয়ার বর্তমানে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। এসব শেয়ার ব্যাংকটির মালিক এস আলম (সাইফুল আলম) পরিবারের এবং তাদের নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দখলে। এ কারণে দেশের পুঁজিবাজারে ব্যাংকটির লেনদেনযোগ্য শেয়ারের পরিমাণ কমে গেছে, যা শেয়ারের দাম বাড়ানোর দিকে নিয়ে গেছে। মাত্র দেড় মাসে ব্যাংকটির শেয়ারের দাম দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষকে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম ও লেনদেন অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে, যা সন্দেহজনক। গত ৬ আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত এই মূল্যবৃদ্ধির ঘটনার পেছনে কোনো ধরনের কারসাজি বা সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। ডিএসইকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে এবং সন্দেহজনক লেনদেন থেকে বিরত থাকার জন্য ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে সতর্ক করতে বলা হয়েছে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ৬ আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম প্রায় ৩৮ টাকা বা ১১৬ শতাংশ বেড়েছে, অর্থাৎ দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেড় মাসে শেয়ারের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
বাজারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানাচ্ছেন, সরকারের পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংককে এস আলম মুক্ত করেছে, এবং এরপর থেকেই ব্যাংকটির শেয়ারের দাম দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাড়তি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে এবং এ আগ্রহের পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে।
বিএসইসি, ডিএসই ও ইসলামী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৮২ শতাংশ শেয়ার এস আলম গ্রুপের হাতে রয়েছে। জুলাই মাসে ব্যাংকটির শেয়ারগুলোর ৩৬ শতাংশ উদ্যোক্তা-পরিচালকদের দখলে ছিল, যা আগস্টে ০.১৮ শতাংশে নেমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এস আলম-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরিচালনা পর্ষদ থেকে বাদ দেওয়ার পর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ধারণের পরিমাণে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের অবশ্যই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হয়। তবে, পটপরিবর্তনের পর ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ায় এই নিয়ম মানা হয়নি। বর্তমানে ব্যাংকটির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে এবং প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার ধারণের পরিমাণ বেড়েছে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ারধারীদের মধ্যে অনেকেই এস আলম-সংশ্লিষ্ট। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও এস আলম-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা রয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ব্যাংকটির ৮২ শতাংশ শেয়ার অবরুদ্ধ থাকার কারণে বাজারে শেয়ার সরবরাহে ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে, যা কিছু গোষ্ঠীকে ব্যাংকটির শেয়ারের দাম বাড়ানোর সুযোগ দিচ্ছে।