সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৯ অপরাহ্ন
স্বৈরাচারের ১৬ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বা স্মার্ট বাংলাদেশের নামে যা হয়েছে, তা দুর্নীতি আর লুটপাট। প্রতিবছর কমপক্ষে ২০ লাখ লোক চাকরির বাজারে ঢুকেছেন। আমরা বসে আছি বেকারত্ব নামের বোমার ওপর।
অর্থনীতির এই ক্রান্তিকালে আমাদের উত্তরণের শক্তিশালী উপায় হতে পারে স্টার্টআপ। প্রযুক্তির সহায়তায় প্রচলিত রীতিনীতি অতিক্রম করে নতুন কিছু করাই স্টার্টআপের বৈশিষ্ট্য। এখানে প্রবৃদ্ধি হয় দ্রুত, ঝুঁকিও বেশি।
বাংলাদেশে স্টার্টআপের ইতিহাস দেড় দশকের। ২০১০ সালে বিকাশ দিয়ে এর যাত্রা শুরু। ১২ থেকে ১৩ বছরে বিনিয়োগ এসেছে ১ বিলিয়ন ডলারের কম। আবার এই বিনিয়োগ সরাসরি দেশের স্টার্টআপে না এসে, একটি বড় অংশ এসেছে বিদেশে তাদের হোল্ডিং কোম্পানিতে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের স্টার্টআপ উন্নয়নের জন্য অনেক কিছু ভাবার অবকাশ আছে। সেগুলো নিয়ে কিছু কথা নিচে দেওয়া হলো।
১. নেশন ব্র্যান্ডিং: বিশ্বের সাধারণ নাগরিকের কাছে বাংলাদেশের তেমন পরিচিতি নেই। যদি থাকেও, সেটা মূলত নেতিবাচক-প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা দরিদ্র দেশ। সঙ্গে যোগ হয়েছে বিগত অগণতান্ত্রিক সরকারের তকমা। অবশ্য কয়েক দশক ধরে ড. ইউনূস বিশ্বব্যাপী পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন। আমরা এখন ড. ইউনূসকে ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশকে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে পারি। বিনিয়োগ বা সেবা রপ্তানির ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী বা ক্রেতা প্রথমে ‘দেশ’-এর রেটিং বিবেচনা করে। কোনো কোম্পানি সম্পর্কে বিবেচনা আসে দ্বিতীয় স্তরে।
২. ইনকিউবেশন: একজন উদ্যোক্তার আইডিয়া ব্যবসায় পরিণত করা বিশাল কাজ। আর প্রথম উদ্যোগ হলে তা হয় সম্পূর্ণ অচেনা ও বন্ধুর। তাদের প্রয়োজন হয় অর্থ, জায়গা, তথ্য, মানবসম্পদ ইত্যাদি। প্রয়োজন বুদ্ধি, পরামর্শ, জ্ঞান ও নেটওয়ার্ক। একজন তরুণ ও নবীন উদ্যোক্তার পক্ষে এসব জিনিস জোগাড় করা সম্ভব নয়।
ইনকিউবেশন সেন্টার নবীন উদ্যোক্তাকে হাতেকলমে সহায়তা করে। শিক্ষকেরা বুদ্ধি ও পরামর্শ দেন। ইনকিউবেশন সেন্টারগুলো সাধারণত কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ে থাকে। এই সেবার বিনিময়ে স্টার্টআপের পক্ষে অর্থ প্রদান করা সম্ভব না হলে শেয়ার দেওয়ারই প্রচলন।
৩. ফান্ড অব ফান্ড: স্টার্টআপরা যেখান থেকে পুঁজি পায়, সেখানে সাধারণত বিনিয়োগকারীকে কোম্পানির শেয়ার দিতে হয়। এই ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানিগুলো অর্থ পায় লিমিটেড পার্টনার থেকে। তাঁরা হতে পারেন কোনো বিত্তশালী ব্যক্তি, সংস্থা, পেনশন ফান্ড, প্রভিডেন্ট ফান্ড, করপোরেট, ব্যাংক, বিমা বা অন্য কোনো ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বা প্রাইভেট ইকুইটি ফান্ড। কিছু ফান্ড সরাসরি স্টার্টআপে বিনিয়োগ না করে অন্য কোনো ভেঞ্চার ফান্ডে বিনিয়োগ করে। এতে তাদের সুবিধা দুটি—ঝুঁকির বিস্তার, দ্বিতীয়ত লিভারেজ, ভেঞ্চার ফান্ড আরও অর্থ জোগাড় করে তার উদ্দেশ্য সাধনে সহায়তা করে।
ভারতে স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া বা সিডবি ৫০০০ কোটি রুপির অধিক ফান্ড চালু করেছে, যা এসএমইতে বিনিয়োগকারী ফান্ডদের অর্থায়ন করে, ফান্ড অব ফান্ড হিসেবে। শর্ত থাকে, সেই ফান্ড সিডবির দেওয়া অর্থের সমপরিমাণ বা তারও বেশি জোগাড় করবে এবং তা এসএমইতে বিনিয়োগ করবে। বাংলাদেশে ফান্ড অব ফান্ড নেই, তাই ভেঞ্চার ফান্ডের টাকা জোগাড় করতে বেগ পেতে হয়।