বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৪ পূর্বাহ্ন
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতির প্রভাবে বাংলাদেশের প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো মারাত্মক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। মার্কিন ক্রেতারা একের পর এক অর্ডার স্থগিত করে দেওয়ার খবর জানাচ্ছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারকরা।
বুধবার (২ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের তুলাজাত পণ্যের উপর শুল্ক ১৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা দেন। এই সিদ্ধান্তের তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে, কারণ তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাত দেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশের যোগান দেয়।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ করেছেন যাতে নতুন শুল্ক কার্যকর করার সময়সীমা তিন মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়। সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বাড়ানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায়। ড. ইউনূস আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ যে পণ্য রপ্তানি করতে চায়, তার মধ্যে রয়েছে তুলা, গম, ভুট্টা ও সয়াবিন, যা যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদেরও উপকারে আসবে।
এই পরিস্থিতিতে দেশের রপ্তানিকারকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এসেনসর ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মুশফিকুর রহমান জানান, রবিবার তার একজন দীর্ঘদিনের মার্কিন ক্রেতা ৩ লাখ ডলারের চামড়াজাত পণ্যের চালান স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা দুজনেই এই পরিস্থিতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছি।” মুশফিকুর রহমান ২০০৮ সাল থেকে ব্যবসা করে আসছেন এবং মাসে গড়ে ১ লাখ ডলারের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেন।
অন্যদিকে, তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান উইকিটেক্স বিডি’র সিইও একেএম সাইফুর রহমান জানান, তার মার্কিন ক্রেতা ১.৫ লাখ ডলারের একটি চালান স্থগিত করেছেন। সাইফুর রহমান বলেন, “ক্রেতা বলেছেন তারা অতিরিক্ত খরচ ভোক্তাদের উপর চাপাতে পারবেন না, তাই আমাদেরই দাম কমাতে হবে।”
এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এর সরকার নিযুক্ত প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন মার্কিন ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠি পাঠিয়ে সহানুভূতির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি লেখেন, “আমরা জানি অনেক ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতা ইতোমধ্যেই তাদের সরবরাহকারীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে, তবে এই মুহূর্তে সরবরাহকারীদের উপর অতিরিক্ত চাপ দিলে সংকট আরও গভীর হবে।”
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “বিশেষ করে ছোট ক্রেতারা চাপ দিচ্ছেন যাতে আমরা পুরো শুল্ক বহন করি বা অন্তত একটি অংশ শেয়ার করি। এই অবস্থায় অনেক অর্ডারই অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থগিত হয়ে গেছে।”
২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮.৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে ৭.৩৪ বিলিয়ন ডলার এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নতুন শুল্কনীতি বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য একটি বড় ধাক্কা হতে পারে, বিশেষত এমন একটি সময়ে যখন খাতটি রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছে।